বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন লোহাগাড়াবাসীর রক্ত-মাংসে মিশে আছে। এমন উৎসবের আয়োজনের ইসলাম ধর্মীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যের মধ্যে ১৯দিন ব্যাপী পবিত্র সীরাতুন্নবী (স:) মাহফিল, মিলাদুন্নবী (স:) মাহফিল, ওরশ, মেলা, বায়তুশ শরফের কুমিরাঘোনা বার্ষিক ফাতেহা শরীফ, ঘোরার দৌড় বর্তমানে চালু রয়েছে।
হিন্দুদের মহোৎসব, বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা।
অন্যান্য উৎসবের মধ্যে মেজবান, কবি গান, মারফতী, গরুর লড়াই, বলি খেলা, বৈশাখী মেলা ও পুঁথি পাঠের আসর ইত্যাদি। কালের বিবর্তনে লোহাগাড়ার অনেক সংস্কৃতি হারিয়ে গেছে। একসময় লোহাগাড়ার চুনতী ইউনিয়নে বিয়ের গাঁয়ে হলুদের রাতে, বরবরণের সময় শেরখানি গাওয়া হত। শেরখানি হচ্ছে সমবেত কণ্ঠে গীতগান। এ সংস্কৃতির গানগুলো এলাকার শিক্ষিতরা রচনা করতেন। উর্দু-ফারসি, বাংলা, লোকগীতি এবং ভারতীয় আধুনিক ও হিন্দু গান শেরখানিতে গাওয়া হত।
বর্তমানে উপজেলায় একটি সংস্কৃতি রীতিমত চালু আছে। সেটা হচ্ছে মেজবান। মেজবানে সকল বয়সী মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। পুরনো সংস্কৃতির মধ্যে আরেকটি চালু আছে সেটি হচ্ছে মফজল মওলানার সভা। যদিও এ সভায় ঘৌড়দৌড় প্রচলিত না থাকলেও বড় করে এ সভায় মেলা বসে। উপজেলার পুরনো সংস্কৃতি ঐতিহ্যের মধ্যে হারিয়ে গেছে ছিদ্দিক মিয়ার গরুর লড়াই ও বলি খেলা। হারিয়ে গেছে পুঁথি পাঠের আসর। অথচ উপজেলার আনন্দ-বিনোদনের উপকরণ হিসেবে সমাদৃত ছিল। রাতের আঁধারে এ পুঁথি পড়া হত। কৃষাণ-কৃষাণীরা এ পুঁথি শোনার জন্য ভিড় জমাতো।
অন্যদিকে উপজেলার বহু পুরনো ঐতিহ্য ছিল মেলা। তখনকার জমিদারেরা এ মেলার আয়োজন করত। মেলায় মাঠির তৈরী পুতুল, হাঁড়ি, কাঠের ঘোড়া, টিনের জাহাজ, খই-বাতাসা, জিলাপি-রসগোল্লা ইত্যাদির জমজমাট আয়োজন হত।
এছাড়া দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমান নাম আমিরাবাদ গোলামবারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়) ছিল লোকজ সংস্কৃতির মিলনমেলা। বিদ্যালয়ে তৎকালীন শিক্ষক নির্মল চন্দ্র পাল উক্ত সংস্কৃতির সাহিত্য রসে জমিয়ে রাখতেন পুরো এলাকা। বর্তমানে এসব সংস্কৃতি বিলুপ্ত।
তথ্যসূত্রঃ ১। লোহাগাড়া ইতিহাস ও ঐতিহ্য বই, লেখকঃ মোহাম্মদ ইলিয়াছ।