লোহাগাড়া উপজেলা। এ যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যরূপে এক রূপবতী উপজেলার নাম। যেদিকেই চোখ যায় সবুজ গাছগাছালি আর পত্র পল্লবে ভরপুর এই গ্রামটি। কোথাও সমতলভূমি আবার কোথাও পাহাড়ের উঁচু টিলা, কাঁচা, পাকা রাস্তা।
যুগে যুগে মোঘল, ত্রীপুরা, আরমানীয়, পর্তুগীজ, ইংরেজ ও আরকানসহ বহু জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাসের পাতা খুললেই এই জনপদের নাম চোখে পড়বে। এসব জাতিগোষ্ঠী এখানে শাসন করেছেন দীর্ঘকাল। বহু সুফী সাধক এসে এই জনপদে ইসলাম প্রচার করেন। এলাকায় নয়টি ইউনিয়ন ও তেতাল্লিশটি গ্রাম রয়েছে।
সে অনেক আগের কথা। পূর্ব পাড়ার আলী মিয়া। আলী মিয়ার বয়স ৩০ বছর। সে বাবার চাষবাস দেখভাল করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আলী মিয়ার বাবা ফজল মিয়া ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজতে শুরু করেন। খুব ছোট বেলায় মাকে হারান আলী মিয়া। বাড়িতে সৎ মা। সৎ মায়ের ঘরে কোন সন্তান না থাকাতে সৎ মায়ের লালনপালনে বড় হয়েছে আলী মিয়া। পড়াশোনা করার সুযোগ তেমন হয়নি। কোনভাবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বাবার চাষবাস দেখাশোনা করে। দক্ষিণ পাড়ায় আলী মিয়াদের জমিতে ধানের চাষ করা হয়। সেই সুবাদে বাপ বেটার দক্ষিণ পাড়ায় যাওয়া হয়। আলী মিয়া একদিন লাঙল কাঁদে নিয়ে জমিতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। এমতাবস্থায় রাস্তার ধারে পুকুর ঘাটে কোমরে পানির কলসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রূপবতী রহিমা। পরনে হলুদ রঙের শাড়ী, শাড়ীর আচল কোমরে বাঁধা, হাতে মেহেদি আর বাহারি রঙের চুরি, চোখে কাজল আর ঠোটে গোলাপি লিপস্টিক, কানের দোল তো আছেই। আলী মিয়া রহিমাকে দেখে থমকে গেল। এক পলক থাকাতেই আর চোখ ফেরাতে পারছে না। তাই রহিমাকে বেশিক্ষণ দেখার জন্য অজুহাত করে লাঙল কাঁদে নিয়ে পুকুর ঘাটের দিকে গেল। রহিমার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাত পা ধৌতে লাগল আলী মিয়া; এদিকে রহিমা কলসিতে পানি নিয়ে পুকুর ঘাট থেকে হাসতে হাসতে বাড়িতে চলে গেল। আলী মিয়া কথা বলতে চেয়েও বলতে পারলো না; মেয়েটির নাম জানতে খুব ইচ্ছে জেগেছিল। ততক্ষণে রহিমা চলে গেল! ফজল মিয়া ছেলের জন্য পাত্রী খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাচ্ছে। পাত্রীর খোঁজ খবর দিতে বেশ কয়েকটা ঘটককেও বলে রেখেছে। এলাকার সবচেয়ে চটপটে ঘটক নান্নু ঘটক নামে পরিচিত। বিয়ের জোড়া লাগানো কোন ব্যাপার না নান্নু ঘটকের। দক্ষিণ পাড়ার আদু ফকিরের অপূর্ব রূপবতী মেয়ে রহিমার ছবি নিয়ে ফজল মিয়ার বাড়িতে একদিন হাজির হলেন নান্নু ঘটক। ফজল মিয়া পাত্রীর ছবি দেখেই বলেন বাহ্ মেয়ে তো চমৎকার।
ফজল মিয়াঃ তো মেয়ের বাড়ি কোথায়? মেয়ের বাপ-ভাই কি করে?
নান্নু ঘটকঃ দক্ষিণ পাড়ার আদু ফকিরের মেয়ে। আদু ফকির এখন অনেক সম্পত্তির মালিক। ছেলে দুইটা বিদেশ থাকে। মিয়া ভাই এই মেয়েকে ছেলের বউ করে নিয়ে আইলে বাড়িতে তোমার কোন কিছুর কমতি থাকবে না।
চলবে…..
