১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে ভারত অধিরাজ্য ও পাকিস্তান অধিরাজ্য নামে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সূচনা হয়। পরবর্তীতে ভারত অধিরাজ্য ভারত প্রজাতন্ত্র বা ভারত গণরাজ্যে পরিণত হয়। এদিকে পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান। দুটি প্রদেশের মধ্যে ছিলো সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও ভাষাগত মৌলিক পার্থক্য। এই পার্থক্য থাকা সত্বেও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৪৮ সালে উর্দুকে দুই প্রদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত মানুষের ভাষা ছিলো বাংলা আর পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্তানরত মানুষদের ভাষা ছিলো উর্দু। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষরা তাদের নিজেদের মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দু ভাষাকে গ্রহণ করার জন্য তারা মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। তারা অপ্রত্যাশিত ও অন্যায্য এই ঘোষনাকে মেনে নিতে পারেনি। তাদের মাঝে গভীর ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হল। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষরা রাষ্টভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন দমন করতে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। ঢাকা শহরে সমস্ত মিটিং, মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও কিছু রাজনৈতিক নেতারা মিলে ১৪৪ ধারা অমান্য করে ঢাকার রাজপথে মিছিল বের করে। এতে পুলিশ গুলি বর্ষণ করে। এতে শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকতসহ নাম না জানা অনেকেই। বিশ্বে মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করা এটি ছিল একমাত্র দৃষ্টান্ত।
ইউনেস্কোর ১৮৮টি সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের ভোটে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করে। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলেও যেটা বলা জরুরি। ২০০০ সাল থেকে ১৮ বছর ধরে জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্র রফিক, শফিক, সালাম, বরকতের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই দিনকে না জেনেই পালন করে আসছে। জাতিসংঘের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও এই দিনের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা নেই। বর্তমান প্রজন্মের একটি ভুল ধারণা, তারা মনে করেন নিজেকে আধুনিল হিসেবে জাহির করতে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে হবে। এই ভুল ধারণা লালন করার ফলে তারা মাতৃভাষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অথচ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকালে ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা যায়। উন্নত বিশ্বের এমন কিছু রাষ্ট্র রয়েছে যারা ইচ্ছে করেই নিজের ভাষার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে ইংরেজি ভাষার চর্চা করেন না। অনেক দেশে আবার অঞ্চলভেদে আঞ্চলিক ভাষাকেও কথ্যভাষার পাশাপাশি লিখিত ভাষা হিসেবেও ব্যবহার করে। এঁদের থেকে আমাদেরও শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। কারণ আমরা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি। মূলত এই ভাষার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধও সংঘটিত হয়েছিল। তাই এই ভাষাকে আমাদের ভালোবাসা উচিৎ। মায়ের ভাষার পাশাপাশি প্রয়োজনে অন্যভাষা শিখতে হবে। তবে মায়ের ভাষাকে যেন ছোট করা না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার। আজকের এই মহান দিনে লোহাগাড়ার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট লোহাগাড়াবিডি.কম এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিহির এর পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলী এবং সালাম।
