লোহাগাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে সবুজ-শ্যামল ছায়াঘেরা গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্য মাটির ঘর। এক সময় প্রতিটি গ্রামে মানুষের নজর কাড়ত সুন্দর এ মাটির ঘর। কালের বিবর্তনে সভ্যতার ছোঁয়ায় আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে এই গ্রামীণ ঐতিহ্য। এলাকার প্রবীণ সোলাইমান কোম্পানি জানান, শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতে মাটির ঘর আরামদায়ক। এসব ঘরে শীতকালে গরম ও গরমকালে অনুভূত হতো শীতের পরশ। তাই মাটির ঘরকে প্রকৃতির এয়ারকন্ডিশন বলে অভিহিত করেন এলাকার মুরুব্বিরা। জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই মাটির ঘরের প্রচলন ছিল। অল্প খরচেই তৈরি করা যায় এ ঘর। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় অথবা টিনের ছাউনি দেয়া হয়।
কিছু এলাকায় দ্বিতল মাটির ঘর চোখে পড়ত। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের এক মাসের কাছাকাছি সময়ের প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রে গৃহিণীরা মাটির দেয়ালে বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনের হরেক রঙের সংমিশ্রণে প্রাকৃতিক দৃশ্য, পশু-পাখির ছবি অঙ্কন করে তাদের নিজ বসতঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন। এক সময় সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার অনেক পরিবার আরামদায়ক বলে মাটির ঘরে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তবে প্রবল বর্ষায় মাটির ঘরের ক্ষতির পরিমাণটা একটু বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভূমিকম্প, বন্যা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার না হলে এক একটি মাটির ঘর শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্রযুক্তির বিকাশে পাকা-দালান আর আকাশছোঁয়া অট্টালিকার কারণে প্রায় বিলুপ্তির পথে আবহমান গ্রামীণ বাংলার প্রতীক ও প্রকৃতির এয়াকন্ডিশন খ্যাত মাটির ঘর। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আগামী প্রজন্মকে মাটির ঘর দেখাতে, চেনাতে, জানাতে নিয়ে যেতে হবে জাদুঘরে।
লেখকঃ হোসাইন মেহেদী, সম্পাদক, প্রিয় দেশ ম্যাগাজিন।